পাইন বাদাম দামি কেন | পুরুষদের ক্ষমতা বাড়ায় পাইন বাদাম Pine nuts
পাইন বাদাম দামি কেন | পুরুষদের ক্ষমতা বাড়ায় পাইন বাদাম Pine nuts
পাইন বাদাম খিদে বোধ দূর করতে এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য পাইন বাদাম খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড। এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন- ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিন হার্ট অ্যাটাক ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে. পুরুষদের ক্ষমতা বাড়ায় পাইন বাদাম
পাইন বাদামের উপকারিতা, ব্যবহার ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া |
বাদামে অ্যালার্জি নেই, তাও বাদাম খান না এরকম মানুষ বোধহয় পাওয়াই মুশকিল। দুপুরে বা বিকেলে ট্রেনে বাসে যেতে যেতে পাওয়া মনের খিদে মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে পেট ভরানো খাবারের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য খাবার হল বাদাম। পাইন নাট বা পাইন বাদামও এর ব্যতিক্রম নয়। ছোট্ট ছোট্ট এই বাদামগুলি খাবারে যোগ করলে এর মুচমুচে ভাব আর মিষ্টি গন্ধ খাবারটিকে করে তোলে আরোও মজাদার এবং পুষ্টিকর।
হ্যাঁ, আকারে ছোট হলেও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যা সুস্বাস্থ্য পাওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা জানাব, পাইন বাদাম খাওয়া কেন জরুরি?
In This Article
- পাইন বাদাম কী?
- পাইন বাদামের উপকারিতা
- পাইন বাদামে উপস্থিত উপাদানগুলোর পরিমাণ নিম্নরূপ –
- পাইন বাদাম কীভাবে ব্যবহার করবেন?
- পাইন বাদাম কীভাবে বাছবেন এবং সংরক্ষণ করবেন?
- পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী :
পাইন বাদাম কী?
পাইন বাদাম হল মূলতঃ পাইন গাছের বীজ। হাজার হাজার বছর ধরে পাইন বাদাম খাদ্যাভাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে পরিচিত। গ্রেট বেসিনে বসবাসকারী স্থানীয় আমেরিকানরা প্রায় দশ হাজার বছর ধরে এই বাদামের চাষ করে এসেছে। ইউরোপ এবং এশিয়াতে বিখ্যাত হওয়ার আগে থেকেই অস্তিত্ব রয়েছে এই বাদাম চাষের। খ্রিস্টপূর্বাব্দ দশ হাজার বছর সময়কালে নর্মাডিক শিকারিরা যে এই পাইন বাদাম চাষ করতেন, তার ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় এখনও। বর্তমানে এই গাছ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে সমুদ্র থেকে প্রায় ১৮০০ মিটার থেকে ৩৩৫০ মিটার উচ্চতার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
পাইন গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘পাইনাস জেরার্ডিয়ানা’। পাইন গাছকে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান এবং গ্রীক ভাষায় যথাক্রমে ‘পিগনন্’, ‘পাইনোনেস’, ‘পাইনিয়েনকারনেন্’ এবং ‘কৌকৌনারি’ বলে ডাকা হয়। দুনিয়া জুড়ে মোট ২০ প্রজাতির পাইন গাছ দেখা যায়। তবে মূলতঃ ‘মেক্সিকান পাইনন’, ‘কলোরাডো পাইনন’, ‘চাইনিজ নাট পাইন’ এবং ‘ইটালিয়ান স্টোন পাইন’- এই চার প্রজাতির পাইন গাছের বীজ থেকেই পাইন বাদাম বানানো হয়।
পাইন বাদামের উপকারিতা
খিদে বোধ দূর করতে এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য পাইন বাদাম খুবই উপকারী। কারণ এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড। এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন- ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিন হার্ট অ্যাটাক ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সর্বোপরি, এই বাদামে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি ভালো করে, এবং তা ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যর জন্যও বেশ উপকারী। গর্ভাবস্থায় পাইন বাদাম খাওয়াও ভীষণ জরুরি, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
নীচে পাইন বাদামের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রইল-
১. ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকারী
গবেষণা থেকে জানা যায় যে ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’ রোগের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে পাইন বাদাম খাওয়া খুব উপকারী। (১) টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীরা প্রত্যেকদিন এই বাদাম খেলে তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমবে। এছাড়াও, স্ট্রোক বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যার মতোো এই রোগের আনুষাঙ্গিক নানা ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করবে।
ডায়বেটিক রোগীদের নিয়ম করে উদ্ভিজ্জ তেল ও প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাইন বাদামে রয়েছে উদ্ভিজ্জ তেল ও প্রোটিনের সেইসব গুণ যা ওজন বাড়ায় না কিন্তু এই রোগের সমস্ত উপসর্গ হ্রাস করে এবং রোগীকে সুস্থ রাখে (২)।
২. হৃৎপিণ্ড সুরক্ষিত রাখে
নিত্যদিন এই বাদাম খাবার অভ্যাস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। (৩) এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ – এর মতো মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন ই ও ভিটামিন- কে হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে।
রক্তচাপ কম থাকলেও পাইন বাদাম খাওয়া জরুরি। এতে থাকা ভিটামিন-ই লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে দেহের সর্বত্র অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। এমনকি কোনও স্থানে আঘাত পেয়ে কেটে গিয়ে রক্তপাত হলে ভিটামিন-কে রক্ততঞ্চনে সহায়তা করে।
৩. হাই-কোলেস্টেরল রোগের জন্য উপকারী
হাই-কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে পাইন বাদাম খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা পাইনোলিক অ্যাসিড শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শরীরে এই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হলে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা বা হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
ওজন কমানোর জন্য ডায়েটেশিয়ানের দেওয়া ডায়েট চার্টে নিশ্চয়ই কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সঙ্গে করতে হয় অনেক এক্সারসাইজ। বাড়তি মেদ ঝড়াতে চাইলে এসবের পাশাপাশি খান পাইন বাদাম (৪)।পাইন বাদামে থাকা পাইনোলিক অ্যাসিড ক্ষুধা দমন করে বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সর্বোপরি, এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি পেটের চর্বি ঝড়ায়।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধক
পাইন বাদামে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান – ম্যাগনেশিয়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রত্যেকদিন সিরাম ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা যদি ১০০ মিলিগ্রাম করে হ্রাস পায় তবে অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২৪ শতাংশ বেড়ে যায়। (৫) এছাড়াও পাইন বাদামে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাধা প্রদান করে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৬. ব্রেন অর্থাৎ স্নায়ু ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
আমাদের অনেকের বিশেষত কিশোর কিশোরীদের মধ্যে যাদের হতাশা ও উদ্বেগজনিত রোগ দেখা যায়, তাদের প্রত্যেকদিন পাইন বাদাম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, পাইন বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, ও ডিপ্রেশন কমায়। এছাড়াও আয়রনে সমৃদ্ধ পাইন বাদাম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকঠাক হয় (৬)।
৭. হাড় মজবুত করে
পাইন বাদাম খেলে হাড় মজবুত হয়। এতে থাকা ভিটামিন-কে ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান উপাদান হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অল্পতেই হাড়ে চিড় খাওয়া বা ভেঙে যাওয়া অর্থাৎ ফ্র্যাকচারের হার কমায় (৭) (৮)।
আমাদের দেহে ভিটামিন-কে এর অভাব হওয়ার সাধারণ কারণ হল কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া। (৯) মজার বিষয় হল, পাইন বাদামে রয়েছে খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষমতা, ফলে প্রতিদিন পাইন বাদাম খেলে আমাদের আর ওষুধ খাওয়ার দরকার হয় না। তাই, ভিটামিন-কে এর অভাব তো হয়ই না, উলটে এই ভিটামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পাইন বাদামে যে ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক আছে, তা দেহের রোগ প্রতিরোধ করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ম্যাঙ্গানিজ হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে আর জিঙ্ক যে কোনও রকমের ক্ষত সারিয়ে তোলে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। একটি রিপোর্টে জানা গেছে, ডায়েটে অতিরিক্ত জিঙ্ক যোগ করলে তা বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জিঙ্ক আমাদের দেহের টি- কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে আক্রমণকারী প্যাথোজেনদের ধ্বংস করে।
৯. চোখের দৃষ্টিশক্তি
পাইন বাদামে প্রচুর পরিমাণে লুটিন আছে যা একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এটিকে চোখের ভিটামিনও বলা হয়। সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ আমেরিকাবাসীর স্ট্যান্ডার্ড আমেরিকান ডায়েট প্ল্যানে পর্যাপ্ত পরিমাণ লুটিন থাকে না। আমাদের দেহের ৬০০টি ক্যারোটিনয়েডের মধ্যে ২০টি আমাদের চোখে রয়েছে। এর মধ্যেও মাত্র দুটি অনেক বেশি পরিমাণে আছে যার মধ্যে একটা লুটিন। এটি চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয়, গ্লুকোমা ইত্যাদি চোখের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এইভাবে পাইন বাদাম চোখকে ভালো রাখে।
১০. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের কোষকে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি দেহের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। পাইন বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার জন্য এই বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ভালো।
১১. খিদে মেটানো
গবেষণায় জানা গেছে, যে পাইন বাদামে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড খিদে নিয়ন্ত্রণ করে। (১০) পাইন বাদাম
