অ্যাভোকাডো কি কোথায় পাওয়া যায় অ্যাভোকাডোর উপকারিতা Avocados
অ্যাভোকাডো কি কোথায় পাওয়া যায় অ্যাভোকাডোর উপকারিতা Avocados
অ্যাভোকাডো কি
Avocado বা অ্যাভোকাডো
প্রজাতি বা প্রকারভেদ
বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে কয়েক শত প্রজাতির অ্যাভোকাডো ফল পাওয়া যায়। এই সকল প্রজাতিকে প্রধান তিনটি দলে ভাগ করা হয়েছেঃ ১) মেক্সিকান, ২) গুয়াতেমালা, ও ৩) ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান।
অ্যাভোকাডো কোথায় পাওয়া যায়
ধারনা করা হয় মেক্সিকোর পুয়েবলা রাজ্যের তেহুয়াকান উপতক্যা অ্যাভোকাডোর উৎপত্তি হয়। পূর্ব-মধ্য মেক্সিকো, আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় কূল বর্তী অঞ্চলগুলোতে সব চেয়ে বেশি অ্যাভোকাডো চাষ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভন্ন অনলাইন শপ ও লোকাল ফলের দোকানে অ্যাভোকাডো কিনতে পাওয়া যায়।
অ্যাভোকাডো ফলের দাম
পুষ্টিগুনে ভরপুর অ্যাভোকাডো ফলের দাম শুনলে আপনি চমকে যেতে পারেন। এক এক কেজি অ্যাভোকাডো ফলের দাম ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
পুষ্টিগুন
অ্যাভোকাডোর পুষ্টিগুন শুনলে আপনি অবাক হয়ে যেতে পারেন। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ৮০ গ্রাম অ্যাভোকাডোতে রয়েছে ১৫২ ক্যালরি, ৫ গ্রাম প্রোটিন, ৬ গ্রাম ফ্যাট, ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬ গ্রাম ফাইবার, ৩৬০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ও ৫৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই।
অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা
পুষ্টিবিদ ও বিজ্ঞানি উইলসন পোপেনোর ভাষ্য মতে, অ্যাভোকাডো হচ্ছে মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার একটি বড় উপহার। তাহলে আপনি নিশ্চয়ই ধারনা করতে পারছেন এর পুষ্টিগুন কেমন হতে পারে বা এর উপকারিতা কেমন হবে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে চলুন অ্যাভোকাডো ফলের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
১) পুষ্টি চাহিদা পুরন
পুষ্টিকর ফলের তালিকায় অ্যাভোকাডোর স্থান প্রথম সারিতে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-ই, ফাইবার এবং আয়রন, কপার ও পটাশিয়াম। যা আনার শরীরে পুষ্টি চাহিদা পুরন করে।
২) হার্টের উন্নতি সাধন
প্রচুর ফ্যাট সমৃদ্ধ এই ফলে প্রায় ৬০% মন্সাচুরেরেটেড ফ্যাট রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই মন্সাচুরেরেটেড ফ্যাট হৃদরোগ এবং নিম্ন রক্তচাপ থেকে রক্ষা করে। এবং এতে থাকা পটাশিয়াম, ফাইবার হৃদপিণ্ড ও কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপকার করে।
৩) চোখের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি
অ্যাভোকাডোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-ই, পাশাপাশি এতে রয়েছে লুটেইন, ক্যারোটিন ও জেক্সানথিন যা আপনার চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পাশাপাশি চোখের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি সাধন করে। পাশাপাশি চোখে ছানি পড়ার ঝুকি হ্রাস করে।
৪) ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ
পুষ্টিবিদদের মতে খাবারের সাথে অ্যাভোকাডো খেলে ২৩ শতাংশ বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। এবং খাওয়ার পরবর্তী ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় খাওয়ার ইচ্ছা ২৮ শতাংশ হ্রাস পায়। যা আপনাকে খুদা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ফলে আপনি যদি ওজন কমাতে ডায়েট কন্ট্রোল করতে চান তাহলে প্রদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমান মতো অ্যাভোকাডো যোগ করতে পারেন। পাশাপাশি এতে থাকা ফাইবার ও লো-কার্বস ওজন কমানোর প্রক্রিয়া সহজ করে।
৫) বাতের ব্যাথা থেকে মুক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা দেশ গুলোর মতো আমাদের দেশেও বাতের ব্যাথা একটি নিয়মিত রোগে পরিণত হয়েছে। এক দিনে বা এক মাসে চিরতরে বাতের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। অনেকের মতে একবার বাতের ব্যাথা হলে এটি সারা জীবন ধরে থাকে। এই ফল এক্সট্র্যাস্ট আস্টিওআর্থারাইটিস হ্রাস করে থাকে। এছাড়াও এক বিশেষ সমীক্ষায় দেখা যায় এটি কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাসেও সহায়তা করে।
অ্যাভোকাডো ফলের অপকারিতা
উপকারিতার
অ্যাভোকাডো খাওয়ার নিয়ম
অ্যাভোকাডো খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে আপনি চাইলে বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করতে পারেন। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাভোকাডো রেসিপি দেওয়া হলোঃ
রেসিপি-১. অ্যাভোকাডো লেমন টোস্ট
যা যা প্রয়োজনঃ ২ স্লাইস রুটি/ব্রেড, হাফ (১/২) অ্যাভোকাডো, দুই টেবিল চামচ কুচানো তাজা সিলান্ট্রো/ধনেপাতা, এক টেবিল চামচ লেমন জুস, এক চিমটি লাল মরিচ, একচিমটি বা
যেভাবে
রেসিপি-২. কব (Cobb) সালাদ
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ ৫-৬ টুকরা বেকন, ২-৩ টি ডিম, ১ হেড আইসবার্গ লেটুস পাতা, ইন্সটান্ট পটে রান্না করা ৩ কাপ কাটা মুরগির মাংস, ২ টি টমেটো কুচি, ৩/৪ নীল পনির (গুঁড়া), ফালা আকারে কাটা ১ টি অ্যাভোকাডো, ১/২ টি পিঁয়াজ।
যেভাবে অ্যাভোকাডো সালাদ তৈরি করবেন
শুরুতে ডিমগুলো সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়েনিন এবং মাঝখানকর্তৃক কেটে ২/৪ভাগ করে নিন। একটু প্যানে বেকন বসিয়েশ্রেষ্ঠ তাপে রান্না করতে থাকুন যতক্ষণ না বাদামী রং ধারন করেও ভাগ অংশ করেএকটি বাটি বা প্লেটে রাখুন।- এবার এক হেড লেটুস
পাতা কুচি কুচি করে কেটে ধুয়েজল ঝরিয়েএকটি সুবিশাল সাইজের প্লেটে ছড়িয়ে দিন। - ছড়ানো লেটুস
পত্রের ওপর চিকেনগুলো এক পাসকর্তৃক সাজিয়ে দিন, চাইলে প্লেটের মাঝখানেদুইটি সারিতে সাজিয়েদেওয়ার জন্য পারেন।সঙ্গে পিস করা ডিমগুলোও। - পিঁয়াজগুলো সালাদের জন্য একটু
লম্বা লম্বা করে কুচি করেনিন এবং বড় এক১টি টমেটো হলে ৪/৬ পিস ছোট হলে দুই পিস করে কেটে নিন। - অ্যাভোকাডোর মাঝখান
কর্তৃক ঘুরিয়ে কেটে বীজটি ফেলে দিনও এরউপরের আস্তরণটি তুলে ফেলুন। পেয়ারার মতো করে ছোট ছোট পিস করুন। - ডিমের
সাইডে দুই/তিন সারিতেখনন করা অ্যাভোকাডো বসিয়ে দিন।টমেটো এবং পিঁয়াজকুচি সাজিয়ে দিন।উপরে কুচানো ধনেপাতা, মাংসের টুকরো, পিঁয়াজও চিজ ছড়িয়ে দিন। - সব শেষে ভিনেগার, এক চামচ সরিষার তেল, দুই এক ফালি রসুন কুচি (পছন্দ না করলে দেওয়ার
প্রয়োজন নেই), ১/৩ কাপ জলপাই তেল, ১/৪ চামচ লবন, ১/৮ চামচ কালো মচির১টি বোতল বা ছোট পটে নিয়ে ঝাঁকিয়ে নিন।এবং আপনারলাইক মতেওপর কর্তৃক ছড়িয়ে দিন।
কিভাবে অ্যাভোকাডো চাষ করা হয়
এশিয়াতে বিশেষ করে বাংলাদেশে অ্যাভোকাডোর চাষ তেমন হয় না বললেই চলে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে ফলন আসতে দীর্ঘ সময় লাগা। আবহাওয়ার ও মাটির গুনাগুনের তারতম্যের কারনে ৮ থকে ১০ বছর সময় লাগে। আপনি চাইলে বাংলাদেশে এর চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। তাহলে চলুন এ পর্যায়ে অ্যাভোকাডো এর চাষ পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাকঃ
১. কিভাবে বীজ হতে চারা উৎপাদন করবেন
প্রথমে পাকা বা পরিপক্ব ফল হতে বীজ আলাদা করে নিন। সংগৃহীত বীজের উপরে থাকা কালো আবরন পানি দিয়ে হালকা ভাবে ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন এর উপরের বাদামি আবরণ যাতে উঠে না যায়।
২. মাটি/বীজতলা প্রস্তুত
বীজতলা বা টবে অ্যাভোকাডো চারা উৎপাদনের জন্য ছোট ছোট গর্ত করে নিন এতে সম পরিমাণ মাটি ও মোটা বালি এবং কোকোডাস্ট মিশিয়ে নিন। আপনি চাইলে বীজ তলায় আগে থেকে জৈব সার দিয়ে রাখতে পারেন।
৩. বীজ রোপণ
জমি প্রস্তুত হয়ে গেলে মাটির ১ ইঞ্চি নিচে বীজ পুতে দিন। অর্থাৎ বীজ বসিয়ে বীজের উপরে ১/২ ইঞ্চি পরিমাণ সামান্য পরিমাণ মোটা লাল বালু ও কোকোডাস্ট মিশ্রণ দিয়ে ঢেকে দিন। বীজ জমিতে বীজ রোপণের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে প্রতিটা বীজের চওড়া ভাগ বা দিক নিচের দিকে থাকে।
জমি শুকনো হলে সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে এবং বিকালে রোদ পড়ে গেলে অর্থাৎ সূর্যাস্তের দিকে ঝর্ণা দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিন। খেয়াল রাখতে হবে বেশি পানি পরে মাটি আটকে না যায়। বীজ বপনের ৩০ থেকে ৮৪ দিনের মধ্যে অংকুর দেখা যাবে। তবে কিছু কিছু সময়ে এ সময় একটু বেশিও লাগতে পারে।
৫. অ্যাভোকাডো চারা রোপণ
জমিতে বীজ বপন করা হলে অঙ্কুরের
বাড়ির
প্রতিটি
এ
৬. পানি নিষ্কাশন ও সেচ
বর্ষার দিনে খেয়াল রাখতে হবে avocado গাছের চারার গোঁড়ায় যেন পানি জমে না যায় আবার শুষ্ক মৌসুমে মাটি শুকিয়ে মারা না যায়। শুষ্ক মৌসুমে ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দিয়ে দিবেন এবং এর গোঁড়ায় খড়কুটা, কচুরিপানা কিংবা লতাপাতা দিয়ে দিলে মাটিতে দীর্ঘ সময় রস সংরক্ষিত থাকে।
অ্যাভোকাডো তেলের উপকারিতা
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত অ্যাভোকাডো তেল কিনতে পাওয়া যায়। অ্যাভোকাডো ফলের পাশাপাশি এর তেলেরও এ রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। চলুন অ্যাভোকাডো তেলের ৫ টি উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
১. ত্বক ময়েশ্চারাইজ
অ্যাভোকাডো তেলে ভিটামিন-ই এর পাশাপাশি পটাশিয়াম, লেসিথিন এবং আরও অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা আপনার ত্বকে পুষ্টি যোগায় আর করে তোলে আরও বেশি ময়েশ্চারাইজ।
আমাদের ত্বকে থাকা এপিডার্মিস নামের স্তরটি সহজেই এই পুষ্টি উপাদানগুলো শুষে নেয় এবং উজ্জ্বল ও নতুন ত্বক গঠনে সহায়াতা করে।
২. ব্রন ও ট্রিট রোধ
এই তেল ব্যবহারের পর অল্প সময় রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক হাইড্রেট হয়। এছাড়া অ্যাভোকাডো তেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এফেক্টস ট্রাডেড সোর্স রয়েছে, যা আপনার মুখের ব্রণের সাথে থাকা লালভাব এবং প্রদাহ দূর করতে সহায়ক।
৩. রোদে পোড়া থেকে রক্ষা
অ্যাভোকাডো তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা আপান্র ত্বককে রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে। এক বিশেষ গবেষণায় দেখা যায়। এর তেলে থাকা ভিটামিন-ই, বিটা ক্যারোটিন, প্রোটিন, ভিটামিন-ডি ত্বককে প্রশান্ত রাখে। এবং আরেক গবেষণায় দেখা যায় এটি ত্বককে ক্ষতিকর ইউভি রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।
৪. নখের স্বাস্থ্যের উন্নতি
অনেকে নখ ভাঙা ও নখের চারপাশ শুকনা হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে অ্যাভোকাডো তেল ব্যবহার করে থাকে।
৫. সোরিয়াসিস এবং একজিমা প্রদাহ থেকে মুক্তি
অ্যাভোকাডো তেলের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন, একজিমা এবং সোরিয়াসিস এর কারনে হওয়া শুষ্ক, এবং ফ্ল্যাঙ্কযুক্ত ত্বক নিরাময়ে সহায়তা করে।
অ্যাভোকাডো তেলের দাম
ফলের মতো অ্যাভোকাডো তেল এরও বেশ ভালো দামী। এক বোতল ১২০ মিলি অ্যাভোকাডো তেলের দাম ৫০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা।
